রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:২৬ অপরাহ্ন
মুজিবুর রহমান বাবু, ই-কণ্ঠ টোয়েন্টিফোর ডটকম ॥ আজ ১৩ জুলাই গায়ানায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও বাংলাদেশের মধ্যে খেলা শুরু বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায়। টাইগাররা গায়ানায় বৃষ্টিবিঘিœত প্রথম ওয়ানডেতে ৬ উইকেটের দারুণ জয়ে সিরিজে ১-০’ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া অধিনায়ক তামিম ইকবালের কথায় পরিষ্কার, পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে ফেবারিট হলেও এই জয়ের মূল্য অনেক। কারণ ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে টেস্ট ও টি- টোয়েন্টিতে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ-শিবির আত্মবিশ্বাস ফিরে পাবে। প্রথম ওয়ানডেতে রীতিমতো পাত্তাই পায়নি স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
গায়ানায় দ্বিতীয় ওয়ানডেতে জিতে এক ম্যাচ আগেই সিরিজ জয়ের হাতছানি এখন টাইগারদের সামনে। সেটাকে ভালোভাবেই কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ। আগের ম্যাচে তিন উইকেট নিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হয়েছিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই অলরাউন্ডার জানিয়েছেন, শেষ ম্যাচ অবধি অপেক্ষা করবেন না তারা।
গায়ানায় আজ জিতলেই সিরিজ জয় টাইগারদের। এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ জিততে চায় বাংলাদেশ। আরও নিখুঁত পারফর্মেন্সে এক ম্যাচ হাতে রেখেই সিরিজ নিশ্চিতের প্রত্যয় তারকা ওপেনারের কণ্ঠে। আজ ঘুরে দাঁড়াতে চায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। নিকোলাস পুরানের বিশ্বাস সামর্থ্যরে সেরাটা দিতে পারলে বাকি দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ পকেটে পোড়া সম্ভব। তবে ওয়ানডেতে অপ্রতিরোধ্য বাংলাদেশের বিপক্ষে কাজটা তাদের জন্য মোটেই সহজ হবে না। ১৮ ম্যাচে সর্বোচ্চ ১২ জয়ে আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ সুপার লীগের দ্বিতীয় স্থানে তামিম ইকবালের দল।
সমান জয় সত্ত্বেও নেট রান রেটে শীর্ষে ইংল্যান্ড। এ পর্যন্ত ২১ খেলায় ৮ জয়ে পাঁচে উইন্ডিজ। এই চিত্রই বলে দেয় ওয়ানডেতে বাংলাদেশ কতটা দাপুটে। যদিও সিরজটা সুপার লীগের অংশ নয়! ২০১৮ সালে আগের সফরে টেস্ট হারলেও ওয়ানডে ও টি২০ দুটি সিরিজই জিতেছিল বাংলাদেশ। এবার নেতৃত্বে ফেরা সাকিবের দলও আভিজাত্যের সাদা পোশাকে হালে পানি পায়নি। ২-০তে হোয়াইটওয়াশের পথে হার যথাক্রমে ৭ ও ১০ উইকেটে। সেন্ট লুসিয়া থেকে ডমিনিকায় আলোচিত ফেরিযাত্রার পর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের জন্য মাঠের ক্রিকেট ছিল আরও দুঃস্বপ্নের। প্রথম ম্যাচ বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত হয়। পরের দুই ম্যাচে অসহায় আত্মসমর্পণ। সুতরাং প্রথম ওয়ানডে জয়ের পর তামিমের মুখে আত্মবিশ্বাস ফেরানোর বক্তব্যটা পরিষ্কার। বৃষ্টির কারণে ৪১ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
জবাবে ৩১.৫ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ (১৫১/৪)। ৯ ওভারে ২ মেডেন, ৩৬ রানের বিনিময়ে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচসেরা হয়েছেন স্পিনিং-অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ। ৪ উইকেট পেয়েছেন বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম। অবিচ্ছিন্ন শেষ উইকেট জুটিতে এ্যান্ডারসন ফিলিপ (২১*) ও জেডেন সিলেস (১৬*) যোগ করার কারণে বলার মতো স্কোর পায় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এছাড়া ইনিংসে অন্তত চারটি সহজ ক্যাচ মিস করে বাংলাদেশ। তা না হলে স্বাগতিকরা আরও আগেই গুটিয়ে যেত।
দাপুটে জয়ের পরও তাই অধিনায়ক তামিম উন্নতির অনেক জায়গা দেখছেন, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজে টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি হারের পর এই জয় অবশ্যই দলে আত্মবিশ্বাস ফেরাবে। তবে অনেক জায়গায় আমাদের উন্নতি করতে হবে। আরও একটা ভাল দলের সঙ্গে খেলা হলে এই ক্যাচগুলোর অনেক চড়া মূল্য দিতে হতে পারত। আগেও দুর্ভাবনার কথা বলেছি, এটা বন্ধ হতে হবে বা কমে আসতে হবে। কারণ চার-চারটা ক্যাচ ছেড়ে এভাবে হয় না। আমরা হয়তো ১১৫ রান তাড়া করতাম ক্যাচ না ছাড়লে। এই একটা দিক আমাদের খুঁজে বের করতে হবে যে ভুল কোথায় হচ্ছে। কারণ অনুশীলনে আমি কোন ভুল দেখি না। এটা নিয়ে সতর্কভাবে আলোচনা করতে হবে আমাদের। বারবার একই ফিল্ডার ক্যাচ মিস করছে, যা বাজে ব্যাপার। আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন এটা সবসময় না হয়। অবশ্যই আমরা টানা দ্বিতীয় জয়ে আগেই সিরিজ নিশ্চিত করতে চাই।
৬৯ বলে ২ চার ও ১ ছক্কায় সর্বোচ্চ অপরাজিত ৪১ রান করেন মাহমুদুল্লাহ। নাজমুল হোসেন শান্ত আউট হন ৩৭ রান করে। নুরুল হাসান সোহান অপরাজিত ২০। আর ২৫ বলে ৪ চার ও ১ ছক্কায় ৩৩ রান করে রানআউট হন তামিম। এদিন আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ছক্কার সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন অভিজ্ঞ এ ওপেনার। ২২৬ ম্যাচের ২২৪ ইনিংসে তার মোট ছক্কা এখন ১০০টি। বাংলাদেশের হয়ে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ছক্কা মুশফিকুর রহিমের। ২১৮ ইনিংস খেলে তার ছক্কা ৮৫টি। ১৮০ ইনিংসে ৭১ ছক্কা নিয়ে তৃতীয় মাহমুদুল্লাহ। রেকর্ডে পরের নামটি কোন ব্যাটসম্যানের নয়, ১৫৬ ইনিংসে ৬২ ছক্কা নিয়ে চারে মাশরাফি বিন মুর্তজা! ছক্কার বিশ্বরেকর্ডের ধারেকাছে অবশ্য নেই বাংলাদেশ।
৫৯ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো ম্যাচসেরা হলেন অদম্য এ অলরাউন্ডার, যার মধ্যে তিনবারই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। ওদিকে প্রথম ম্যাচে বড় হারের পরও সিরিজ জিততে আত্মবিশ্বাসী ওয়েস্ট ইন্ডিজের রঙিন পোশাকের অধিনায়ক নিকোলাস পুরান, ‘আমরা জানি, বাংলাদেশ ওয়ানডেতে কয়েকটি ম্যাচ জিতেছে আমাদের বিপক্ষে। এটা হতেই পারে।
জেতার জন্য কী করতে হবে সেটাও জানা আছে মিরাজদের। তিনি বলছিলেন, ‘জেতার জন্য প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। ম্যাচ জিততে হলে যে প্রক্রিয়া— সেটি প্রত্যেক বিভাগেই ভালো করতে হবে। মাথায় অবশ্যই আছে ম্যাচ জেতার (ভাবনা), তবে কীভাবে জিতব, সেটিও মাথায় আছে। সে সব নিয়েই আলোচনা করেছি। ’
আমি অনুভব করছি, আমাদের এখনও সিরিজ জয়ের সুযোগ আছে। দ্বিতীয় ম্যাচে নিশ্চিত করতে হবে আমরা যেন নিজেদের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে মাঠে নামতে পারি।